সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, ফজিলত ও দোয়া নিয়ে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা স্বল্প-সীমিত হওয়া এবং অল্পে তুষ্ট থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তবে মানুষ অল্পে তুষ্ট হোক কিংবা তার চাহিদা অফুরন্ত হোক। পৃথিবীতে চলাফেরার ক্ষেত্রে সে বিভিন্ন প্রয়োজনের মুখোমুখি হবে এটাই তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সময় এবং আদিমকাল- সবসময় মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের বিষয়টি একি রকম ছিল।
এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানের (ধন-সম্পদ) যদি একটি পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে সে চাইবে, সে যেনো দুটি পাহাড় পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। আর তার সম্পদ যদি দুটি পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়, তবে সে চাইবে যে, তার তিনটি পাহাড় পরিমাণ সম্পদ হোক। মাটি ছাড়া অন্য কিছু আদম সন্তানের পেট ভরাতে পারবে না। অতঃপর যে তাওবা করবে, মহান আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (আহমাদ, হাদিস, ২১৯০৬, সিলসিলা সহীহাহ, হাদিস, ১৬৩৯)
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত একটি সাধারণ নফল নামাজ। ‘সালাতুল হাজত’ নামাজ আলাদা কোনো নিয়ম নেই। এই নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোনো দিন বা সময় বাধা নেই, স্বাভাবিক নামাজের মতোই ভালোভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। চাইলে চার রাকাতও পড়া যাবে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত বাংলায়
এই নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত নেই। নামাজের নিষ্দ্ধি সময়গুলো ছাড়া যেকোনও সময় জায়নামাজে দাঁড়িয়ে মনে মনে, সালাতুল হাজতের নিয়ত করলেই হয়। অর্থাৎ এভাবে বললে হবে যে, ‘হে আল্লাহ! আমি দুরাকত সালাতুল হাজত আদায় করছি, আপনি আমার নামাজ কবুল করুন’। এর বাইরে অন্য কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
সালাতুল হাজত নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা (প্রশংসা) এবং নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করে— নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে। আরো পড়ুন – গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি? নিয়ম ও নিয়তসহ জেনে নিন
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া আরবিতে
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لاَ تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلاَّ غَفَرْتَهُ وَلاَ هَمًّا إِلاَّ فَرَّجْتَهُ وَلاَ حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلاَّ قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
সালাতুল হাজত নামাজের পর দোয়া বাংলা উচ্চারণ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হা-জাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর-হামার রা-হিমিন।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়ার অর্থ
আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি অতি সহিষ্ণু ও দয়ালু, সকল দোষ-ক্রটি থেকে পবিত্র তিনি। মহান আরশের প্রভু। সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি সারা জাহানের রব। আপনার কাছেই আমি যাঞ্ছা করি— আপনার রহমত আকর্ষণকারী সকল পূণ্যকর্মের অসিলায়, আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত আকর্ষণকারী সকল কাজের বরকত, সকল নেক আমলে সাফল্য লাভের এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। আমার কোনো গুনাহ যেন মাফ ছাড়া না থাকে। কোনো সমস্যা যেন সমাধান ছাড়া না রয়ে যায়। আর আমার এমন প্রয়োজন— যাতে রয়েছে আপনার সন্তুষ্টি রয়েছে, তা যেন অপূরণ না থাকে। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (তিরমিজি, হাদিস : ৪৭৯; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৪)
দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিস শরিফে বর্ণিত উপরোক্ত দোয়াটি- অন্যান্য দোয়ার সাথে সাধারণ নামাজের শেষেও বিশেষভাবে পড়া যেতে পারে। এই দোয়াটিই পড়তেই হবে— বিষয়টি এমন নয়। নিজের মত করে দোয়া করলেও কোনো অসুবিধা নেই।
সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত
অনেক ক্ষেত্রে মানুষ প্রয়োজনের বিষয়গুলো নিজের সামর্থ্যের মধ্যেই পূরণ করে ফেলতে পারে আবার কখনো এর জন্য অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কখনোবা অন্যের কাছে সহযোগীতা চেয়েও পাওয়া যায় না। এমন সময় হতাশ না হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি প্রয়োজনের সময় অন্য কারো কাছে হাত না পেতে সালাতুল হাজাত বা ‘প্রয়োজনের নামাজ’ পড়তে বলেছেন। হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ)
সালাতুল হাজত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?
আরেক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনু আবি আওফা থেকে বর্ণিত আছে যে- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বা কোনো আদম-সন্তানের কাছে যদি কারও কোনো প্রয়োজন হয়— তবে সে যেন অজু করে এবং খুব সুন্দরভাবে যেন তা করে। এরপর যেন দুই রাকআত নামাজ আদায় করে। এরপর যেন আল্লাহর হামদ করে ও রাসুল (সা.)-এর উপর দরূদ সালামের পর নিম্মে বর্ণিত দোয়াটি পড়ে।
সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়
কোন ভালো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সালাতুল হাজত পড়া হয়। এটি নফল ইবাদত। সালাতুল হাজতের নিয়তে দুই রাকাত নফল নামাজ মাকরুহ সময় বাদে যে কোন সময় পড়া যায়। এই নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাতে নিজের উদ্দেশ্যের কথা বলুন।