নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ও আবেদন করতে কি কি লাগবে?

Rate this post

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম কী? নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে কি কি লাগবে? ভোটার নিবন্ধন করবেন কিভাবে? আপনার এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের ফিচার। নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, চাকরির আবেদন, পাসপোর্ট করার মত কাজে ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই প্রয়োজন হয়।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ও আবেদন করতে কি কি লাগবে?

বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের বয়স ১৬ বছর হলেই নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। জেনে নিতে পারেন নতুন ভোটার হতে কি কি কাগজ লাগে? নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরম ডাউনলোড করার সব বিষয়।

নতুন ভোটার হওয়ার বা নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার যোগ্যতা

  • নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স ১৬ বছরের বেশি হতে হবে।
  • পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধন করা হয়নি এমন হতে হবে।

নতুন ভোটার হতে কি কি কাগজ লাগে

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স (শিক্ষাগত সনদ না থাকলে)
  • বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি (অবশ্যই)
  • ইউটিলিটি বিলের কপি/বাড়ি ভাড়ার রসিদ/হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ (ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে)
  • নাগরিকত্ব সনদ
  • নতুন ভোটার অঙ্গীকার নামা (প্রযোজ্য হলে)

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

দুই ভাবে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার আবেদন করা যায়।

  • অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন আবেদন।
  • উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করে আবেদন।

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড করার আবেদন

অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে হবে। এখানে আপনার নাম, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে একাউন্ট তৈরি করুন। এরপর ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করার পর কাগজপত্র আপলোড করে আবেদন জমা দিন। সবশেষে আবেদনের কপি কাগজপত্রসহ নির্বাচন অফিসে জমা দিন।

আবেদনপত্রটি যাচাই বাছাই করে আপনাকে ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার জন্য ডাকা হবে এবং একটি ভোটার নিবন্ধন ফরমের স্লিপ দেওয়া হবে। বায়োমেট্রিক প্রদানের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আপনার আবেদন অনুমোদিত হলে অনলাইন থেকেই আপনার নতুন ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।

অনলাইনে নতুন ভোটার আবেদন ফরম পূরণ করবেন যেভাবে

অনলাইনে নতুন ভোটার আবেদন ফরম পূরণ করবেন যেভাবে

অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন এবং নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করুন। আপনার যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে, তাহলে আপনি রেজিস্টার করতে পারেন। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে আপনি নতুন নিবন্ধন করতে পারেন। এজন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১ – অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
প্রথেমেই এই লিংকে যান নতুন ভোটার নিবন্ধন এবং এখানে আপনার নাম, জন্মতারিখ ও ক্যাপচা কোডটি লিখে বহাল বা সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। তারপর মোবাইল ভেরিফিকেশনের জন্য একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। অবশ্যই আপনার সচল এবং এই মহুর্তে আপনার কাছে আছে এমন মোবাইল নম্বরটি দিবেন। অবশ্যই আপনার বা যার আবেদন করছেন তার নিজের মোবাইল নম্বর দিতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে লগইন করার জন্য বা পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের জন্য নম্বরটি প্রয়োজন হবে।

আপনার মোবাইলে আসা ৬ ডিজিটের ভেরিফিকেশন পিন কোডটি লিখুন এবং বহাল বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান। এখানে আপনাকে একটি ইউনিক ইউজারনেম (Username) ও পাসওয়ার্ড (Password) সেট করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এই ইউজার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করে, জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড, সংশোধনের আবেদন ও অন্যান্য সেবা নিতে পারবেন।

ইউজারনেম ইংরেজি নাম ও সংখ্যার মিশ্রনে দিবেন এবং পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ৮ ডিজিটের হতে হবে। যদি Username Already Exists ইউজারনেম ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে এমন সমস্যা দেখায়, ইউজারনেম পরিবর্তন করে পুনরায় চেষ্টা করুন।

ধাপ ২ – NID Application Form পূরণ করুন
জাতীয় পরিচয়পত্র সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন ও লগইন করার পর আপনি নিচের মত একটি ড্যাশবোর্ড পাবেন। যদি অটোমেটিক লগ ইন না হতে পারেন, আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন।

এখান থেকে আপনাকে নতুন ভোটার আবেদন করতে হবে।প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করুন এবং উপরের ডান পাশ থেকে এডিট বাটনে ক্লিক করুন। তারপর নিচে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা লিখতে হবে।

প্রথম অংশে আপনার সকল তথ্য এবং অবশ্যই আপনার পিতা ও মাতার নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখতে হবে। বড় ভাই/ বোনের তথ্য প্রদান না করলেও চলবে। এর পর স্বামী/স্ত্রীর তথ্য বৈবাহিক অবস্থা অবশ্যই দিবেন, এবং স্বামী বা স্ত্রীর নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে দিবেন।

এরপর দ্বিতীয় অংশ অন্যান্য তথ্যে ক্লিক করুন। এখানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও ধর্ম বাছাই করুন। অন্য তথ্যগুলো সম্ভব হলে দিতে পারেন, না দিলেও কোন সমস্যা হবেনা।

এরপর তৃতীয় অংশে ঠিকানা অপশনে যান এবং আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বাছাই করুন। আপনার অবস্থানরত দেশ বাছাই করুন। তারপর আপনি বর্তমান নাকি স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হতে চান সেই ঠিকানার পাশে (এই ঠিকানায় ভোটার) এর পাশে টিক দিন।

বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করুন এবং ভোটার এরিয়া নির্বাচন করুন। পরবর্তী ধাপে আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।

ধাপ ৩ – আবেদন সাবমিট করুন
এ ধাপে আপনার অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজগুলোর স্ক্যানড কপি বা ছবি আপলোড করতে হবে না। আপনার আবেদনের বিস্তারিত তথ্যসমূহ পুনরায় যাচাই করে নিন যাতে কোন ভুল না থাকে। তথ্যসমূহ সঠিক থাকলে আপনার আবেদনটি নিশ্চিত করুন ও জমা দিন।

অনলাইনে আবেদন জমা হলে, ড্যাশবোর্ড থেকে আপনার আবেদন ফরমটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে নিন। এরপর আপনি যে এলাকায় ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন সেখানকার উপজেলা নির্বাচন অফিস অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জমা দিন।

ভেরিফিকেশন
এ ধাপে আপনার নতুন ভোটার হওয়ার অনলাইন আবেদনটি উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিস যাচাই বাছাই করবে। যাচাই করার জন্য আপনার সাথে তারা যোগাযোগ করতে পারে। সব কিছু ঠিক থাকলে আপনাকে বায়োমেট্রিক প্রদানের জন্য ডাকা হবে।

বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান
আবেদনটি যাচাই শেষে আপনার ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ (Biometric Information) নেয়ার জন্য ডাকা হবে। এর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে আপনার আবেদনটি অনুমোদিত হলেই আপনি অনলাইন হতে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

আপনি অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করতে পারবেন যে এটি অনুমোদন হয়েছে কিনা। অনুমোদন হওয়ার পর অনলাইন থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসে নতুন ভোটার আবেদন করবেন যেভাবে

উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার হওয়ার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১: ভোটার নিবন্ধনের জন্য আপনি যে এলাকায় বসবাস করছেন সেখানকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করুন।

ধাপ ২: ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করে নির্বাচন অফিসে জমা দিন। প্রতিটি ফরমের আলাদা একটি Tracking Number থাকে। তাই এই ফরম ফটোকপি করে ব্যবহার করা যাবে না। ফরমে যেন ভুল না হয়, আগে ফরমের ফটোকপিতে পূরণ করে নিয়ে পরে মূল ফরমে লিখতে পারেন।

ধাপ ৩: আপনার সকল তথ্য যাচাই করার পর, সঠিক মনে হলে আপনাকে Biometric Information প্রদানের জন্য ডাকা হবে। নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করুন।

ধাপ ৪: আপনার ভোটার নিবন্ধনের আবেদন অনুমোদন হলে। আপনার মোবাইলে আপনার এনআইডি নম্বরসহ একটি মেসেজ পাবেন। এই মেসেজ পাওয়ার পর অনলাইন থেকে NID Card ডাউনলোড করতে পারবেন।

ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণে কয়েক বিষয়
অনলাইনে আবেদন করুন আর সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে করুন, ভোটার নিবন্ধন ফরমে শনাক্তকারী ও যাচাইকারীর তথ্য এর মত কিছু জরুরি বিষয় থাকে।

ফরমের ৩৪নং ক্রমিকে শনাক্তকারী হিসেবে আপনার প্রতিবেশি কোন একজন ব্যক্তির নাম ও এনআইডি নম্বর লিখতে হবে। এছাড়া ফরমের ৪০নং ক্রমিকে যাচাইকারী হিসেবে আপনার এলাকার জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাউন্সিলরের নাম, সাক্ষর ও এনআইডি নম্বর প্রয়োজন হবে।

নতুন ভোটার অঙ্গীকার নামা
যেসব নতুন ভোটারের বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একটি অঙ্গীকার নামা চাইতে পারে। এই অঙ্গীকার নামা এজন্য যে, তিনি পূর্বে কখনো ভোটার নিবন্ধন করেননি এবং প্রথমবারই ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করছেন। একাধিকবার ভোটার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলে তিনি তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন।

নতুন ভোটার নিবন্ধন সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে?

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে লাগে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন, বাবা মার এনআইডি, ইউটিলিটি বিলের কপি/জমির খাজনা রশিদ/ হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ এবং বাবা ব্যতীত রক্তের সম্পর্ক আছে এমন ৩ জনের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।

অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন করবো কিভাবে?

অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য নির্ধারতি ওয়েবসাইট থেকে নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করুন। আপনার যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে, তাহলে আপনি রেজিস্টার করতে পারেন। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে আপনি নতুন নিবন্ধন করতে পারেন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড অনলাইনে কিভাবে পাব?

ভোটার নিবন্ধনের আবেদন অনুমোদন হলে, আপনার মোবাইলে NID নম্বর সহ একটি মেসেজ পাবেন। এরপর services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন ও লগইন করে ভোটার আইডি ডাউনলোড করতে পারবেন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করবো কিভাবে?

আবেদনপত্র যাচাই বাছাই শেষে আপনার ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার জন্য ডাকা হবে। এর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে আপনার আবেদনটি অনুমোদিত হলেই আপনি অনলাইন হতে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

নতুন ভোটার আবেদন ফরম ডাউনলোড করবো কিভাবে?

নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য আপনি যে এলাকায় বসবাস করছেন সেখানকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। নতুন ভোটার আবেদন অনলাইনে করার জন্য ফরম ডাউনলোড করতে হবে না।