সর্বজনীন পেনশন : কত জমা দিলে কত টাকা পাবেন? বিস্তারিত জেনে নিন

4.9/5 - (12 votes)

সর্বজনীন পেনশন : কত জমা দিতে কত টাকা পাবেন? বিস্তারিত জেনে নিনসর্বজনীন পেনশন সুবিধা চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ অনুযায়ী এই ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। চারটি স্কিমের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন প্রদান করা হবে। এগুলো হলো – প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।

সর্বজনীন পেনশন : কত জমা দিলে কত টাকা পাবেন?

১. প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য)

বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক মাসিক ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাসী ব্যক্তি দেশে ফেরার পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে, পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন।

প্রবাস স্কিমে একজন প্রবাসী যদি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ৪২ বছর জমা দেন, এরপর তিনি মাসে পাবেন ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে। ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে জমা দিলে মাসে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ৫ হাজার টাকা জমা দিলে মাসে পাবেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে।

২. প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য)

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠানের মালিক মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ না করলে, সেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

Understanding Universal Pension: Deposits, Eligibility, and Benefits

বেসরকারি কোনো চাকরিজীবী যদি মাসে ৫ হাজার টাকা করে ৪২ বছর জমা দেন, তাহলে তিনি মেয়াদ শেষে মাসে পাবেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে। ৩ হাজার টাকা জমায় মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ২ হাজার টাকা জমায় মেয়াদ শেষে প্রতি মাসে পাবেন ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা করে।

৩. সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য)

অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন– কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি শ্রেণির ব্যক্তি মাসিক ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সুরক্ষা স্কিমে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে ৪২ বছর জমা দিলে প্রতি মাসে পাবেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে। ৩ হাজার টাকা জমায় প্রতি মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা, ২ হাজার টাকা জমায় প্রতি মাসে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা এবং ১ হাজার টাকা জমায় মেয়াদ শেষে প্রতি মাসে পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে।

৪. সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে সময়ে সময়ে প্রকাশিত আয়সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) মাসিক ১ হাজার চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক হাজার টাকার মধ্যে চাঁদা দাতা ৫০০ টাকা ও সরকারি অংশ ৫০০ টাকা হবে।

অর্থাৎ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্ধারিত সমতা স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেবে সরকার। এক্ষেত্রে একজন অংশগ্রহণকারীকে মাসে দিতে হবে ৫০০ টাকা, এর বিপরীতে সরকার দেবে আরও ৫০০ টাকা। এভাবে কেউ যদি ৪২ বছর জমা দেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মাসে পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন

  • ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে শর্ত রয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সের নাগরিকরা স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।
  • প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে শর্ত রয়েছে, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে, নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
  • সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে শর্তের মধ্যে রয়েছে- স্কিমে অংশগ্রহণ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।
  • কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর প্রদান করা হবে।
  • সকল ক্যাটাগরির আবেদনে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ অবহিত করা হবে।

সর্বজনীন পেনশন রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে

রেজিস্ট্রেশন করতে কী কী লাগবে

জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের শাখা, রাউটিং নম্বর, নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ বা পাসপোর্ট নম্বর, নমিনির মোবাইল নম্বর এবং নিজের বার্ষিক আয় জানা থাকতে হবে।

সর্বজনীন পেনশন রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে

ছয়টি ধাপে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রথমে আপনাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর সবার ডান পাশের পেনশনার রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করতে হবে। অথবা সরাসরি এখানে ক্লিক করুন।

প্রথম ধাপ— ব্যক্তিগত তথ্য

এরপর রেজিস্ট্রেশন করুন ফরমে আমি সম্মত আছি বাটনে ক্লিক করে প্যাকেজ/স্কিম নির্বাচন করতে হবে; এনআইডির নম্বর দিতে হবে; জন্মতারিখ নির্বাচন করতে হবে; মোবাইল নম্বর দিতে হবে; ইমেইল আইডিও দিতে হবে। তারপর ক্যাপচা প্রদান করে পরবর্তী পেজে যেতে হবে।

এরপর আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি যাবে। সেটি প্রদান করতে হবে। এরপর পরবর্তী পেজে চলে যাবে। সেখানে আপনার এনআইডির ছবিসহ যাবতীয় তথ্য চলে আসবে। এই পেজে আপনাকে বার্ষিক আয় উল্লেখ করে পেশা সিলেক্ট করতে হবে। এরপর বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ— স্কিম তথ্য

এরপর পরবর্তী পেজে স্কিম সিলেক্ট করাই থাকবে। আপনাকে শুধু মাসিক চাঁদার পরিমাণ সিলেক্ট করতে হবে এবং চাঁদা পরিশোধের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি মাসিক, ত্রৈমাসিক কিংবা বার্ষিকভাবে চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।

তৃতীয় ধাপ— ব্যাংক তথ্য

এই পেজে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর উল্লেখ করে হিসাবের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর রাউটিং নম্বর জানা নাই বাটনে ক্লিক করে ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সিলেক্ট করতে হবে। এতে রাউটিং নম্বরের ঘরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সিলেক্ট হয়ে যাবে।

চতুর্থ ধাপ— নমিনি তথ্য

এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে নমিনির পেজ আসবে। সেখানে নমিনির আইডির ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের অপশন আছে। নমিনির যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তাহলে তার নম্বর ও জন্মতারিখ দিতে হবে।

এরপর নমিনি সিলেক্ট করুন বাটনে ক্লিক করলে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চলে আসবে। সেখানে নমিনির সম্পর্কের ঘরে সম্পর্ক সিলেক্ট করতে হবে, নমিনির প্রাপ্যতার হার কত শতাংশ দিতে চান সেটি উল্লেখ করতে হবে। নমিনির মোবাইল নম্বরও যোগ করতে হবে। আপনি চাইলে এভাবে আরও নমিনি যুক্ত করতে পারবেন

পঞ্চম ধাপ— সম্পূর্ণ ফর্ম

এরপর পরবর্তী পেজে চলে গেলে সেখানে সম্পূর্ণ ফর্মটি দেখাবে। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোড করতে পারবেন। সবার নিচে ‘আমি নিশ্চিত করছি যে, উল্লিখিত সকল তথ্য সঠিক এবং আমি সর্বজনীন পেনশনের সকল আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে অবগত হয়ে এতে সম্মতি প্রদান করছি।’ সম্মতি প্রদান চেক বক্সে টিক দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ষষ্ঠ ধাপ— পেমেন্ট

এরপর পেমেন্ট পেজ আসবে। এখানে স্কিমের নাম, চাঁদা প্রদানের ধরন ও কত টাকা চাঁদা সেটি দেখাবে। সঠিক থাকলে পেমেন্ট করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর সোনালী ব্যাংকের, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ভিসা ও মাস্টার কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন রকেট, বিকাশ, নগদ, উপায় বা ট্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।

সর্বজনীন পেনশনের প্যাকেজ/স্কিমসমূহের বিস্তারিত ধারণা পেতে এখানে ক্লিক করুন; সর্বজনীন পেনশন আইন ও বিধিমালা দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন, যোগাযোগ ও টিউটোরিয়াল দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা দেবেন যেভাবে

যেকোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই স্কিমের জন্য ধার্য করা হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা দিতে না পারলে কী হবে?

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।

কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপবিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।

চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখ করে যেকোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশ নিলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে।

সব স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে। চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড (এনইআইআর) মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা না দিলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হবে।

সর্বজনীন পেনশন থেকে ঋণ পাবেন যেভাবে

চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে তহবিলে কেবল তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবেন। যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফি’সহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদাদাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুনভাবে কোনো ঋণ নেওয়া যাবে না।

এক নজরে সর্বজনীন পেনশন

২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এক নজরে সর্বজনীন পেনশন সুবিধা –

  • ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
  • পেনশনধারীরা আজীবন, অর্থাৎ মৃত্যুর আগপর্যন্ত পেনশনসুবিধা ভোগ করবেন।
  • বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন এতে।
  • সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আপাতত সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার বাইরে থাকবেন। ভবিষ্যতে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে নাগরিকেরা পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন।
  • প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে, তবে পরবর্তী সময়ে বাধ্যতামূলক করা হবে।
  • ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন নাগরিকেরা।
  • প্রতিটি নাগরিকের জন্য আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে, চাকরি পরিবর্তন করলেও অপরিবর্তিত থাকবে এ হিসাব।
  • সর্বজনীন পেনশনপদ্ধতিতে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানেরও অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা নির্ধারণ করে দেবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
  • মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসী কর্মীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতেও চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
  • সুবিধাভোগীরা বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় তাঁর হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে হিসাব সচল করার সুযোগ থাকবে।
  • সুবিধাভোগীরা আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বাড়তি অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোনো অঙ্ক) জমা করতে পারবেন।
  • ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন পাবেন গ্রাহকেরা।
  • নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে জমাকারীর নমিনি বাকি সময়কালের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন পাবেন।
  • পেনশন কর্মসূচিতে জমা করা অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে, যা সুদসহ পরে পরিশোধ করতে হবে।
  • কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদাদানকারী মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
  • পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
  • এ ব্যবস্থা স্থানান্তরযোগ্য ও সহজগম্য, অর্থাৎ কর্মী চাকরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন করলেও তার অবসর হিসাবের স্থিতি, চাঁদা প্রদান ও অবসরসুবিধা অব্যাহত থাকবে।
  • নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারে।
  • তহবিলে জমা করা টাকা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আর্থিক রিটার্ন নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করবে।
  • পেনশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার।