বাংলাদেশের জন্য এ বছরের ‘সিডস ফর দ্য’ ফিউচার প্রোগ্রাম উদ্বোধন করেছে হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া। এই প্রোগ্রামের উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল (২১ জুন) হুয়াওয়ে বাংলাদেশে একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবার বাংলাদেশ পর্ব থেকে বিজয়ী প্রথম তিনজন পুরস্কার হিসেবে পাবেন হুয়াওয়ে ল্যাপটপ, হুয়াওয়ে ট্যাব এবং হুয়াওয়ে ওয়াচ এবং শীর্ষ ৬ বিজয়ী পাবেন চীনে হুয়াওয়ে সদর দফতরে প্রশিক্ষণ সেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ।
স্টেম (STEM) ও নন-স্টেম (NON-STEM) শিক্ষার্থীদের আইসিটি বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আইসিটি ইকোসিস্টেমের বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে এবার দশম বারের মতো বাংলাদেশে এই প্রোগ্রাম আয়োজন করছে হুয়াওয়ে। প্রোগ্রামে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া রিজিওনের প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং, হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের প্রেসিডেন্ট ঝ্যাং ঝেংজুন, হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক এন্টারপ্রাইজ বিজনেস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মা এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এবং স্বনামধন্য অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি মূল চালিকাশক্তি এবং এক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রোগ্রাম তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার ও ব্যবহারের সুযোগ করে দিবে। তারা হুয়াওয়ের আধুনিক অবকাঠামো পরিদর্শন করবে এবং গ্লোবাল মেন্টর ও বিশেষজ্ঞদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাবে। আইসিটি বিভাগের অধীনে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হল শিল্প এবং একাডেমির মধ্যে ব্যবধান দূর করা। এক্ষেত্রে, আইসিটি একাডেমি প্রতিষ্ঠার মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য হুয়াওয়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “বীজ (সিডস) আশা ও ফলনের প্রতীকস্বরূপ। সহযোগিতার বীজ উন্নয়নের ফল বয়ে আনবে, আইসিটি ক্ষেত্রে মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখবে এবং চীন ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎ মোকাবিলায় চীন বাংলাদেশের সাথে জ্ঞানের বীজ বপন করতে প্রস্তুত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জনে হুয়াওয়ের এ ধরনের উদ্যোগ বেশ অর্থবহ ভূমিকা রাখবে। আমি সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রোগ্রামের সাফল্য কামনা করি।”
হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের প্রেসিডেন্ট ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, “‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রোগ্রাম এ দেশের তরুণদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছে। জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা উপভোগ করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। তরুণদের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করতে সহযোগী হিসেবে হুয়াওয়ে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।”
হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া রিজিওনের প্রেসিডেন্ট ও হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং বলেন, “গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করছে হুয়াওয়ে। আমরা যে দেশে কাজ করি সেখানে মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে বিশ্বাস করি। আমাদের এ বিশ্বাস ও প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায়, তরুণদের জ্ঞান ও ভাবনার পরিসর বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সুযোগ ও প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য হুয়াওয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করছে। ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ এমনই একটি প্রোগ্রাম, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সরাসরি এ শিল্পখাতের সেরা অনুশীলনীগুলো সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারবেন; একইসাথে নিজেদের দক্ষতা যাচাই করার সুযোগ পাবেন।”
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামবলেন, “তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য তাদের আমরা কীভাবে আরও দক্ষ করে তুলতে পারি তার ওপরেই নির্ভর করবে দেশের প্রবৃদ্ধি। হুয়াওয়ে বেশ চমৎকার ও কার্যকরীভাবে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার’ প্রোগ্রাম পরিকল্পনা করেছে, যার মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। আমার প্রত্যাশা, সকল অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে এ বছর প্রোগ্রাম আরও সফলতা অর্জন করবে।”
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষ কিংবা এর ওপরে অধ্যয়নরত থাকতে হবে এবং সিজিপিএ থাকতে হবে ৩.৩ এর ওপরে। এই প্রোগ্রামে নিবন্ধন করতে তাদের একটি কাভার লেটার অথবা আবেদনপত্র পাঠাতে হবে, যেখানে উল্লেখ থাকতে হবে কেনো তারা এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে চায়। এছাড়াও, আবেদন পত্রে সার্বিকভাবে তাদের শেখার আগ্রহের প্রতিফলন থাকতে হবে। এবং আবেদন পত্রসহ তাদের সিভি পাঠাতে হবে sftfbd@huawei.com এই ই-মেইলে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে নির্বাচিত অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ব্যবসা এবং প্রযুক্তি বিষয়ে তিন দিনের বুট ক্যাম্প প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। বুট ক্যাম্প প্রশিক্ষণের পরে, অংশগ্রহণকারীদের একটি প্রকল্প জমা দিতে হবে এবং উপস্থাপন করতে হবে। তাঁদের প্রকল্পের প্রয়োগিক সম্ভাবনা এবং উপস্থাপনা মুল্যায়ন করে বাংলাদেশ পর্ব থেকে সেরা ছয় বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। এই বিজয়ীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার হিসেবে পাবেন হুয়াওয়ে ল্যাপটপ, প্রথম রানার আপ পাবেন হুয়াওয়ে ট্যাব এবং দ্বিতীয় রানার আপ পাবেন হুয়াওয়ে ওয়াচ। এছাড়া সকল বিজয়ীরা চীনে হুয়াওয়ের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ সেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার। এরপর থেকেই, এই প্রোগ্রাম আইসিটি ক্ষেত্রে তরুণদের মেধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হয়েছেন।