ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ‘খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন বিশ্লেষণ এবং সম্ভাব্য সীমাবদ্ধ’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা। সম্প্রতি ড. শাহনাজ হুদার সঞ্চালনা এবং সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. সীমা জামান। মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন সালওয়া তাবাসসুম হক এবং প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বিএম হামিদুল মিসবাহ, ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসাইন। আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবীরা।
এ সময় মতপ্রকাশ, গোপনীয়তা ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩ নাগরিকদের উপাত্তের ও গোপনীয়তা সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন সভার বক্তাগণ। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও সেন্টার ফর এ্যাডভান্সন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ (সি.এ.এল.এস), আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই সভাটি আয়োজন করে।
সালওয়া তাবাসসুম হক মূল প্রবন্ধে বলেন, অনেক সময় নারী বা শিশুর উপর নির্যাতন বা হয়রানির ভিডিও করে বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এইরকম কোনো ভিডিও করলে নারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হয়। এই নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। বিচার কাজে এখন অনেক দেশেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার দেখা যায়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোন প্রেক্ষাপট বুঝতে পারে না। ডিজিটাল ডেটাবেইসে কোন ফাঁক থেকে গেলে তার আউটপুটে ভুল ফলাফল দিতে পারে। সর্বোপরি এই ধরনের ফলাফল আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইউরোপের জেনারেল ডাটা প্রটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) ধারা ২২ এর মতো কিছু আমাদের আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারা যেতে পারে।
ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ বলেন, আর্টিকেল ৪৩ (বি) অনুসারে সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা করার অধিকার রয়েছে।এটা একটা সাংবিধানিক অধিকার, যার সাথে আমাদের ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার অধিকার স্বরাসরী জড়িত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের উপাত্তের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। উপাত্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, রাষ্ট্র নাগরিকদের সৃষ্ট উপাত্ত বিশ্লেষণ করে, নতুন নতুন সরকারি সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া সরকারের নীতি প্রণয়নে ও অন্যান্য সিদ্বান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া সহজতর হবে, যা বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ। সুতরাং ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনিতা অনেক। তবে বর্তমান খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইনে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার আইনি কাঠামো খুব একটা শক্ত বা জোরালো নয়। নাগরিকদের উপাত্তের সুরক্ষার জায়গাটা অনেকাংশে দুর্বল যা আমাদের আর্টিকেল ৩১ ও ৪৩ বি প্রদত্ত সংবিধানিক অধিকার কে খর্ব করে বলে প্রতীয়মান। নতুন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে আমাদের একটি বলিষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক ভাবে অনুসৃত একটি উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রয়োজন, যা নাগরিকদের উপাত্ত সুরক্ষার, মানবাধিকার, আইনি প্রতিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ও অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।