বিউটি স্ট্যান্ডার্ডকে নতুন করে উপস্থাপন করছে টিকটক

Rate this post

বিউটি স্ট্যান্ডার্ডকে নতুন করে উপস্থাপন করছে টিকটকআত্মপ্রকাশ, সৃজনশীলতা এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের জন্য বর্তমানে টিকটক হয়ে উঠেছে একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন বিষয়ে কনটেন্ট নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্মটি প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এসব কনটেন্টের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয়বস্তু হল সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের মানদণ্ড বা বিউটি স্ট্যান্ডার্ডকে নতুন করে তুলে ধরছে টিকটক। প্ল্যাটফর্মটি বদলে দিচ্ছে সৌন্দর্য নিয়ে গতানুগতিক ধারণা। পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটি মানুষকে উৎসাহিত করছে তাদের নিজস্ব সৌন্দর্যকে প্রকাশ করতে।

সমাজ তথাকথিত ধারণা অনুযায়ী সৌন্দর্যের আদর্শ থেকে নিজেকে যারা কম মনে করেন বা যারা নিজেদের সুন্দর মনে করেন না তাদের জন্য একটি নির্ভরতার স্থান হয়ে উঠেছে টিকটক। প্রথাগত মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিপরীতে, টিকটক সকলের তৈরি করা কনটেন্টের মধ্য দিয়ে বিকাশ করে। শারীরিক গঠনে অথবা ত্বকের রঙে ভিন্নতা আছে এমন যে কেউ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পায় এখানে। বর্তমানে ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপটিতে ব্যবহারকারীরা কথা বলছে সৌন্দর্য নিয়ে, যা দূর করে দিচ্ছে সৌন্দর্য মানদণ্ডের পুরানো সব প্রথাগুলো। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ইতিবাচকতা, লৈঙ্গিক সমতা এবং সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে ব্র্যাক তাদের টিকটক অ্যাকাউন্টে প্রচারের কাজ করে। যেখানে উঠে এসেছে সারা বাংলাদেশের মানুষের গল্প।

নিজেকে প্রকাশ করতে, ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই প্ল্যাটফর্মটি। যেখানে ব্যবহারকারীদের মেনে চলতে হয় না কোন সামঞ্জস্যতা বা সৌন্দর্যের গৎবাঁধা নিয়ম। জনপ্রিয় ক্রিয়েটর নওরীন আফরোজ পিয়া দারুণভাবে তুলে ধরেন তার ন্যাচারাল বিউটি। প্ল্যাটফর্মটিতে তাকে বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় বাঙালি পোশাকে। দর্শকদের কাছ থেকে এই কারণে প্রশংসামূলক কমেন্টও পান তিনি। ব্যক্তিগত স্টাইল কিংবা গল্প শেয়ার কিংবা ফ্যাশনের মাধ্যমে সৃজনশীলতা প্রকাশ — প্রতিটি ক্ষেত্রেই টিকটক এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের সত্যিকারের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে পারে নির্দ্বিধায়।

মেকআপ এবং ত্বকের যথাযথ যত্নকে সার্বজনীন একটি বিষয় হিসেবে তুলে ধরে টিকটক সৌন্দর্যচর্চায় এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। যে কেউ মেকআপ টিউটোরিয়াল এবং বিউটি প্রোডাক্ট রিকমেন্ড করতে পারে এখানে। দেখাতে পারে সৌন্দর্যচর্চায় নিজের দক্ষতা এবং শেয়ার করতে পারে তাদের ব্যক্তিগত মতামত। এর ফলে, হাই-প্রোফাইল ইনফ্লুয়েঞ্জার এবং সেলিব্রেটিদের বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের সীমার বাইরে গিয়ে মানুষ সৌন্দর্য নিয়ে ভাবতে পারছে। টিকটক এর ব্যবহারকারীদের ভিন্ন ধারার লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে উৎসাহিত করে। তথাকথিত সৌন্দর্যের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে সেটি নিজের মতো ধারণ করতে প্রেরণা দেয় প্ল্যাটফর্মটি।

সাধারণত সৌন্দর্যের মানদণ্ড কেবল নির্দিষ্ট কোন সংস্কৃতির মধ্যে আবদ্ধ থাকে। সৌন্দর্যের সেই মাপকাঠি অনুযায়ী না হলে, অনেকের জন্য সেটি হয়ে উঠে একটি মানসিক চাপ। সেই প্রেক্ষিতে সৌন্দর্যের এই দিকটি কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরও সহজ করেছে টিকটক। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্ল্যাটফর্মটিতে তুলে ধরছে ব্যবহারকারীরা। একইসাথে চ্যালেঞ্জ করছে স্টেরিওটাইপ ধারণা আর পরিবর্তন আনছে সমাজের দেওয়া সৌন্দর্যের সংজ্ঞায়। টুইঙ্ক ক্যারল এর মতো ক্রিয়েটররা ফিউশন এবং ওয়েস্টার্ন-স্টাইলের পোশাকে ধরা দেন প্ল্যাটফর্মটিতে। অন্যদিকে, রথী আহমেদ তার কনটেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন মডেসট ঘরানার ফ্যাশন। সৌন্দর্য অনুশীলনে এই বিচিত্রতা ভিন্ন সংস্কৃতির পরিসরে তৈরি করেছে পরস্পরের প্রতি সমঝোতা, এবং শ্রদ্ধা।

ইউজার জেনারেটেড কনটেন্টের মাধ্যম ছাড়াও টিকটক প্রসারিত হচ্ছে নানানভাবে। বড় পরিসরে দর্শকদের কাছে পৌঁছতে সক্ষম টিকটক। তাই ব্র্যান্ডগুলো কাজ করা শুরু করেছে প্ল্যাটফর্মটির সাথে। প্রচলিত সৌন্দর্যের বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে ব্র্যান্ডগুলো পণ্যের প্রচার করছে টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, হামজা খান শায়ান তার ট্রেন্ডি ফ্যাশন এবং স্টাইলিশ ড্রেসিং সেন্সের জন্য টিকটকে সুপরিচিত। তিনি কাজ করছেন বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের সাথে আর একইসাথে তাদের পণ্য প্রচার করছেন টিকটকে। বর্তমানে পণ্যের মান নিয়ে গ্রাহকদের বদলে যাওয়া প্রত্যাশার দরুন ব্র্যান্ডিংয়ে এসেছে এমন পরিবর্তন। যেই ক্ষেত্রটি টিকটকের প্রভাবকে এখন আরও বৃদ্ধি করেছে।

সৌন্দর্যের মানদণ্ডকে বা বিউটি স্ট্যান্ডার্ড নতুন করে তুলে ধরার কাজে টিকটক আরও কার্যকরী একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। প্রত্যেককে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সৌন্দর্যের ইতিবাচক দিকগুলো এবং তাদের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরছে প্ল্যাটফর্মটি। যেখানে একইসাথে দূর হয়ে যাচ্ছে সমাজের প্রচলিত সৌন্দর্যের মাপকাঠিগুলো।